Ramakrishna Ashrama & Ramakrishna Mission Ashrama, Dehradun
Ramakrishna Ashrama & Ramakrishna Mission Ashrama, Dehradun
(A Branch Centre of Ramakrishna Math & Ramakrishna Mission, Belur Math, Howrah, West Bengal)

কিষাণপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম
- রামেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

‘তত্বমসি’, ‘অয়মাত্মা ব্রহ্ম’, ‘অহং ব্রহ্মাস্মি’ প্রভৃতি শাস্ত্রোক্ত এই বাণীগুলির অন্তর্নিহিত নিগূঢ় সত্য অন্তরে উপলব্ধি তথা আত্মজ্ঞান লাভ করার লক্ষ্য নিয়ে কঠোর তপস্যার উদ্দেশে হাজার হাজার বছরব্যাপী বহু মুনি-ঋষি ছুটে গিয়েছেন হিমালয়ের শান্ত, নির্জন ক্ষেত্রে। স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দ, স্বামী অখণ্ডানন্দ প্রমুখ ঠাকুরের সাক্ষাৎ সন্তানগণও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। উত্তরাখণ্ডের অন্যতম প্রবেশদ্বার দেরাদুন অতিক্রম করে বারবার তারা পৌছে গিয়েছেন শিবক্ষেত্র হিমালয়ের ক্রোড়ে।

এরকমভাবেই ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্বামীজী যখন দ্বিতীয়বার আসেন দেরাদুনে, তখন তিনি বেদান্তের বাণীকে ব্যাবহারিক রূপদানের জন্য ক্যাপ্টেন এবং মিসেস সেভিয়ারের সহায়তায় সেখানে একটি অনাথাশ্রম স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। সে-সময় তা বাস্তবায়িত না হলেও ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে স্বামী ব্রহ্মানন্দের শিষ্য স্বামী করুণানন্দ দেরাদুন থেকে ৬ কিমি দূরে মুসৌরির পাদদেশে ছবির মতাে একটি স্থান কিষাণপুরে একখণ্ড জমি সংগ্রহ করে একটি আধ্যাত্মিক শিবিরের প্রবর্তন করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই সেই সম্পত্তি রামকৃষ্ণ-সঙ্ঘের তৎকালীন সম্রাধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের নামে নথিভুক্ত করা হয় এবং তৎপরে সেটি বেলুড় মঠের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়; নাম হয় রামকৃষ্ণ আশ্রম’। তখনকার সেই আশ্রমটি সংস্কারের পর বর্তমানে সেটি অতিথি সাধুদের জন্য একটি ভবন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ বৃদ্ধ এবং অসুস্থ সাধুদের একটি কুটির নির্মাণের জন্য বারাণসী রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম তৎকালীন সঘধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক স্বামী সারদানন্দের নামে এই আশ্রম-সংলগ্ন দুটি কুটিরসহ আর-এক খণ্ড জমি ক্রয় করেন। স্বামী তুরীয়ানন্দ তার নামকরণ করেন রামকৃষ্ণ সাধন কুটীর’। পূর্বের রামকৃষ্ণ আশ্রম’ এই ‘রামকৃষ্ণ সাধন কুটীর-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে যায় এবং এ-দুটি সম্মিলিতভাবে একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়ে বারাণসী রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের একটি উপশাখাকেন্দ্র-রূপে পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই ‘রামকৃষ্ণ সাধন কুটীর’ বেলুড় মঠের একটি শাখাকেন্দ্র-রূপে স্বীকৃতিলাভ করে; পুনরায় তার নাম হয় রামকৃষ্ণ আশ্রম’। রামকৃষ্ণ কুটিরের সেই বাড়িটি অপরিবর্তিতভাবে বর্তমান আশ্রমের অফিসঘর।

১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অনুদানস্বরূপ প্রাপ্ত আশ্রম-সংলগ্ন কুটিরসহ সামসের সিং-এর একখণ্ড জমি নানা আইনি জটিলতা কাটিয়ে আশ্রমের অনুকূলে নথিভুক্ত করা হয়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সেখানেই সূচনা হয় এই আশ্রমের মিশন কেন্দ্রটির নাম হয় রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম’। ক্রমে আশ্রমের পুরানাে বাড়িগুলির সংস্কার করা হয় এবং আরও নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। কিষাণপুর আশ্রম তার শান্ত পরিবেশের জন্য বরাবরই বিদগ্ধ পণ্ডিত সন্ন্যাসীদের নিকট আধ্যাত্মিক শাস্ত্র ও সাহিত্য চর্চা, অধ্যাত্মানুশীলন ইত্যাদির জন্য এক বিশেষ আকর্ষণের ক্ষেত্র। স্বামী বিরজানন্দ একাধিকবার এই আশ্রমে অবস্থান করেন এবং বহু ভক্তকে মন্ত্রদীক্ষা দান করে কৃপা করেন। এখানেই স্বামী জগদানন্দ ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’-এর ইংরেজী অনুবাদ করেন; স্বামী তন্ময়ানন্দ করেন “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’-এর তামিল ভাষায় অনুবাদ।

অতি পছন্দের এই আশ্রমে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বামী গম্ভীরানন্দ বহুবার অবস্থান করেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ নভেম্বর তিনিই এই আশ্রমের নতুন শ্রীরামকৃষ্ণ-মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেই মন্দির উদ্বোধন করেন স্বামী রঙ্গনাথানন্দ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে বুদ্ধপূর্ণিমার দিন।

‘Worship'-এর সঙ্গে সঙ্গে স্বামীজী-নির্দেশিত ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’রূপ ‘Work’-এর লক্ষ্য নিয়ে এই আশ্রম আজ মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে। সে-কারণেই নিত্যপূজা, শাস্ত্রালােচনা, জপধ্যান ইত্যাদির সঙ্গে এখানে চলছে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র এবং বিবিধ উন্নয়ন প্রকল্প।

একদা অতি নীরবে এবং ক্ষুদ্রাকারে সূচনা হওয়া শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই আশ্রম কালের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে রামকৃষ্ণ-সঙ্ঘের সাধু-সন্ন্যাসী এবং গৃহিভক্তদের নিকট হয়ে উঠেছে আত্মজ্ঞানলাভের জন্য সাধনভজনের এক আদর্শ স্থান এবং এক মহান তীর্থক্ষেত্র।

প্রচ্ছদের আলােকচিত্র : সৌজন্যে : কিষাণপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম 
প্রচ্ছদপট অলঙ্করণ : শুভ্রকান্তি দে
প্রচ্ছদ-পরিচিতি » কিষাণপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম